আমার প্রথম আয়!
তন্ময় তালুকদার
প্রথম আয়! শোনতে একটু আবেগময় লাগে তাই না?
আজ ঘুম ভাঙ্গে বেলা করেই খানিক, কারণ আগের রাতে ঘুমিয়েছি রাত ৪ টা ৩০ এর দিকে সম্ভবত।
ব্যাপার হলো একটি কাজের জন্য অপ্রত্যাশিত ভাবেই ফোন এসেছিলো মাস কয়েক আগে। আগে কখনো প্রফেশনাল কিছু করি নি। তাই যখন ওপর প্রান্ত থেকে শোয়েব ভাই কাজটির কথা বলছিলেন তখন একটু নার্ভাস লাগছিলো। না না করে করেও হ্যাঁ বলে দিই।
কাজটি কিছুই না, একজন পিএইচডি স্টুডেন্টের (আদিত্য ভাই) রিসার্সের কাজের একটি পার্ট - হেইট স্পিচ নিয়ে ন্যাচেরাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং ও ডেটা ভিজুয়ালাইজেশন এর একটু খানি শরবতে ডেটা এনালাইসিসের কাঁপা হাতে ছেড়ে দেওয়া আন্দাজ মতো নুন-চিনি। অন্তত শুরুতে এমনই সহজ লেগেছিলো।
তবে পিওর এনএলপি নিয়ে কখনো কাজ করি নি আমি তখনো। এডভান্স ভিজুয়ালেশনও এতো পারি না। শিক্ষানবীশ আমি তখন বা এখনও। শেষে ঘাম ঝরেছিলো অনেক এটা বলতে কোনো আক্ষেপ নেই। তবে এটা ঠিক। কখনো করি নি বলে ভয়ও পাই নি যে পারবো না। পারবো এই বিশ্বাস ছিলোই আমার।
তো তারপর অনেক চড়াই উতরাই পার করে কাজটি করে (কিছু বাকি ছিলো বটে, তবে ফাইনাল এক্সাম মাথায় নিয়ে ওইটুকুই করতে গিয়ে কাজ শেষে রিলাক্সের ঔষধ খেয়ে ঘুমাতে হয়েছিলো!) যখন আদিত্য ভাইকে বুঝিয়ে দিই তখন রাত ১০.৩৬ বাজে। তারপর দফায় দফায় কিছু বাগ ফিক্স করতে গিয়ে, ঘুমানোর জন্য পিসি অফ করে শোয়া থেকে উঠে আবার পিসি অন করা রিপিট হয়েছিলো তিনবার। অবশেষে শেষ রাতে শুলেও ঘুম তেমন হয়নি।
সকালে পরোটা খেতে যাওয়ার ভালো একটা রুটিন হয়েছে কয়দিনে। প্রতিদিন আমি স্কন্স রেগুলার খেতে গেলেও নতুন নতুন আশফিকও যোগ দিয়েছে আমার সাথে। ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে আমি পিসিতে বসি। তারপর একে একে সবাই উঠলে, রুটিন মেনে তিনজনে মিলে পরোটা খেতে যাওয়া।
যখন ফিরছি, সিড়িতে তখন, টুং করে ফোনের নোটিফিকেশন টোন বেজে উঠলো। ফোন আনলক করে দেখি নিচের মেসেজ। আমার জীবনের প্রথম আয়। আহ! কি যে এক অনুভূতি। কি করবো বুঝে পাচ্ছি না।
ছবিঃ জীবনের প্রথম আয়ের নোটিফিকেশন। |
জীবনের প্রথম আয় দিয়ে কিভাবে খরচ করা সূচনা করা যায়, ভাবছি।
তো ভেবে ঠিক করলাম, বাবা মা, যাঁরা অজস্র কষ্ট করে তিল তিল করে আমাদের দুইভাইকে বড় করেছেন, মানুষ করেছেন, তাঁদের সারপ্রাইজটা দিই। তাঁরা জানতেন না এই কাজটি করার ব্যাপারে।
তো প্রথমে মা র বাবার ফোনে ১০০ টাকা করে রিচার্জ করে দিলাম। তারপরই ফোন দিলাম মাকে। জিজ্ঞেস করলাম ফ্লেক্সি পেয়েছেন কিনা।
যখন বললাম এই টাকাটা আমি আয় করেছি, জানিনা তাঁদের অনুভূতি কেমন ছিলো। ফোনের এপারে তো আর অনুভূতি বুঝা সহজ নয়!
অন্তত এটা জানি, আমার জীবনের প্রথম আয় করা এই ৫০০০ টাকা হতে যে ১০০ টাকা করে ফ্লেক্সিলোড করেছিলাম বাবা মায়ের ফোনে, সেই টাকাটা দিয়ে কথা বলতে তাঁদেরও অনেক গর্ব হবে নিশ্চয়ই।
একটি পণ করেছিলাম অনেক আগে। ছাত্র জীবনে কখনো টিউশন পড়াবো না, তবে যদি সম্ভব হয় কেরিয়ারের ফিল্ডেই কিছু করে ছাত্র জীবনে আয় করার। সেটা পেরেছি যেন দ্বারপ্রান্তে এসেই।
আর তাই যার কাছে আমি ঋণী, যার কাছে শিখেছিলাম প্রথম How to play with Data সেই কাউসার ভাইকে জানিয়ে দিলাম, আমার চির কৃতজ্ঞতা আর কোডিং করে প্রথম আয়ের খবরও। উনিও অনেক খুশি হয়েছেন!
আর ধন্যবাদ আদিত্য ভাইকে জানাতে চাই আবারো এই লেখার মাধ্যমে, যিনি আমাকে কাজটি দিয়েছেন এবং পারিশ্রমিকও।
রচনাকালঃ ৪ মার্চ, ২০২৩ খ্রিঃ (মধুবাগ, ঢাকা)
Comments
Post a Comment